“কিছু অদ্ভুত চরিত্রের, কুৎসিত জীব, নগ্ন, লোমহীন, রক্ত পিপাসু, ভয়ঙ্কর পশু। যারা নিজেদেরকে মানুষ বলে থাকে।” মানুষকে এভাবে সজ্ঞায়ন করে ‘এ্যানিমেলস ইউনাইটেড (২০১০)’ আ্যনিমেশন চলচ্চিত্রে। চলচ্চিত্রটিতে আফ্রিকান এলাকার একটি জঙ্গল এর কিছু প্রাণী তাদের প্রাকৃতিক পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝে নেয়ার জন্য সকল প্রাণীর সংঘবদ্ধ হওয়ার গল্প বলা হয়েছে হাস্যরসাত্মক উপস্থাপনের মাধ্যমে। এই এলাকার প্রাণীদের সাথে যুক্ত হয় কিছু জলবায়ু উদ্বাস্তু প্রাণী। যারা হাজারো পথ পাড়ি দিয়ে আসে আফ্রিকান এই জঙ্গলে প্রাণীদের জন্য স্বর্গ ভেবে। কিন্তু এখানে এসে তারা বুঝতে পারে আসলে পালানোর কোন উপায় নেই। সবখানেই পেীঁছে গেছে মানুষের অপরিকল্পিত হস্তক্ষেপ প্রকৃতি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপর। তাই আর পালানো নয়; বরঞ্চ বুঝে নিতে হবে নিজেদের অধিকারটুকু। সেই অধিকার আদায়ে বিভিন্ন ধরনের প্রানীদের একাত্মতা হওয়ার গল্প ‘এ্যানিমেলস ইউনাইটেড (২০১০)’ চলচ্চিত্রটি।
আফ্রিকার কোন একটি এলাকা- তৃণভূমি। যেখানে বছরে একটি নির্দিস্ট মৌসুমে পানি আসে একটি নদী থেকে। ঐ একটি মৌসুমের পানিতেই তাদের সারা বছরের খাদ্য এবং পানির যোগান হয়। কিন্তু, এ বছর নির্দিস্ট সময় অতিবাহিত হলেও এখনো পানি আসেনি। প্রাণীরা কম বেশি পানির সংকটে ভুগছে। শুরু হয়ে গেছে ২ টি প্রাণী গ্রুপের মধ্যে পানি নিয়ে ঝগড়া- স্বল্প পরিমাণ পানির উৎস নিয়ে। এমন পরিস্থিতিতে প্রথমেই সিংহ এবং তার বন্ধু (বেঁজি) পানির উৎসের খোঁজে বের হয়। পথের মধ্যে তাদের সাথে দেখা হয়- শ্বেত মেরু ভাল্লুক, অস্ট্রেলিয়ান ক্যাঙ্গারু, প্রায় ৭৫০ বছর ধরে জীবিত কচ্ছপ দম্পতি, টর্কিশ চিকেন প্রভৃতি প্রাণীর সাথে। অবশেষে তারা পানির উৎসের সন্ধান পায়, কিন্তু সেটি পাথর দিয়ে আবদ্ধ। যেটিকে আমরা (মানুষ) বলি ড্যাম্প বা বাঁধ। যা করা হয়েছে একটি ইকোট্যুরিজম এর নামে। এই ইকোট্যুরিজমে আবার বসেছে ১৬৮ তম জলবায়ু সম্মেলন। এই পার্কটিতে বানর, হাঙ্গর, সহ অল্প কিছু (সংখ্যায় এবং প্রজাতিতে) বিভিন্ন প্রাণীকে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। যথারীতি সেখানে তারা বিভিন্ন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয় এবং সবশেষে সিংহ আটকা পড়ে। অন্যরা ফিরে যায় খালি হাতে তাদের জঙ্গলে।
সেখানে পানির সংকট এখন চরমে। অবশেষে তারা সবাই একত্রিত হয় সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য যে পানির উৎস থেকে কীভাবে পানি পাবে। আর যদি পানি না পায় তাহলে তাদের অস্তিত্ত্ব সংকটের সম্মুখীন হবে। কেউ কেউ আরো অপেক্ষা করতে চায়। কেউ মানুষ নামে এমন ভয়ঙ্কর (!) প্রাণী আছে যে পানিকে আটকে রাখতে পারে- এটি বিশ্বাসই করতে চায় না। অবশেষে তারা অধিকাংশ একমত হয় সবাই মিলে গিয়ে ড্যাম্প বা বাঁধ ভেঙে পানি নিয়ে আসবে। পরদিন তারা সবাই একত্রে যায় এবং কিছুটা নাটকীয় এবং সিনেম্যাটিক উপায়ে বাঁধ ভেঙে পানির প্রবাহ তাদের জঙ্গলে নিয়ে আসতে সক্ষম হয় এবং তাদের মাঝে আবার স্বাভাবিক প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। পরবর্তীতে পৃথিবীর সকল প্রাণী একত্রিত হয়ে বিভিন্ন প্রধান প্রাধান শহরে গিয়ে অবস্থান নেয় এবং মানুষের কার্যক্রম অবরোধ করে জানান দেয় তোমরা (মানুষ) যদি তোমাদের কর্মকান্ডে সচেতন এবং প্রাণী ও প্রকৃতি বান্ধব না হও- তবে আমরাও পারি সেটি প্রতিরোধ করতে।
সিনেমাটি আহমরি কিছু নয়। আইএমডিবি রেটিং মাত্র ৪.৯/১০। পরিচালক রেইনহার্ড ক্লস ও হগলার টেপ। কিন্তু সিনেমাটিতে একটি বড় ধরনের দর্শন এবং দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলা হয়েছে।
সিনেমাটি আহমরি কিছু নয়। আইএমডিবি রেটিং মাত্র ৪.৯/১০। পরিচালক রেইনহার্ড ক্লস ও হগলার টেপ। কিন্তু সিনেমাটিতে একটি বড় ধরনের দর্শন এবং দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলা হয়েছে।
আমাদের উন্নয়ন কর্মকান্ডের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আমাদের প্রকৃতি এবং প্রকৃতিক সম্পদ। কিন্তু উন্নয়নের নামে (কখনো সেটিতে ‘ইকো’ শব্দ যোগ করে) যত ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করছি সেটি প্রাণী, উদ্ভিদ, অনুজীব, মাটি, পানি, বায়ু এবং আলোর উপর কি ধরনের প্রভাব পড়ছে বা পড়তে পারে সেটি কী আমরা বিবেচনায় রাখি? এটি যদি আমরা প্রতিবেশের অন্যান্য উপাদানের দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পারি তাহলে সেটি যেমন এই মানুষ প্রজাতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে ভাল ফলাফল বয়ে আনবে ঠিক তেমনি ভাল হবে প্রতিবেশের সকল উপাদানের জন্যও।
মানুষ বলে, তারা নাকি সৃষ্টির সেরা জীব, তাদের ক্ষমতা অসীম। তারা প্রকৃতির সকল বস্তুকে নিজের করায়ত্ত্বে করে নিজেকে সাংস্কৃতিক জীব হিসেবে রূপান্তর ঘটিয়েছে। কিন্তু ক্ষুদ্র অনুজীব এর ক্ষমতা সম্পর্কে কী আদৌ অবগত আছে? শুধু চিন্তা করুন, যে সমস্ত ব্যকটেরিয়া আমাদের চারপাশের জৈব যৌগকে পঁচন ঘটায়। সে সমস্ত অনুজীব যদি নিজেদের কাজটুকু বন্ধ করে দেয়; কিংবা মনে করুন তারা অভিযোজন করে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে অন্য কিছুতে (পঁচানো বাদে) রুপান্তর করলো। ভাবুন একদিনেই আমাদের সভ্য পৃথিবী বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে।
আমরা মাঝে মাঝে কিছু মানুষকে তাদের কর্মকান্ডের কারনে বিভিন্ন পশু’র (প্রাণী) নামে কিংবা পশু হিসেবে সম্বোধন করি। কখনো ভেবেছেন কি- সেই মানুষই অন্য প্রাণীর কাছে হয়ে ওঠে- “কিছু অদ্ভুত চরিত্রের, কুৎসিত জীব, নগ্ন, লোমহীন, রক্ত পিপাসু, ভয়ঙ্কর পশু। যারা নিজেদেরকে মানুষ বলে থাকে।”
(ছবিগুলো ইন্টারনেট ওপেন সোর্স থেকে সংগৃহীত)