cover

This page will serve as a collection of all published books.

এটা আমার প্রকাশিত প্রথম কবিতার বই। বইটি সংগ্রহ করতে কুরিয়ারের ঠিকানা দিন, ডাক পিয়নের ঝুলিতে পৌছে যাবে..ইন শা আল্লাহ।
বিনিময় মূল্য ২০০ টাকা। যোগাযোগ এবং বিকাশ : ০১৭২৩০৫৭৮২১ (personal)
ধন্যবাদ।
#স্বেচ্ছামৃত্যু শব্দটি কী ভাবায় আপনাদের?
যে শরীরের মৃত্যু সকল সৃষ্ট জীবের জন্য অবধারিত। সে মৃত্যুই একক এবং অমোঘ সত্য?
নাকি জীবনের পরতে পরতে আরো নানান ধরনের মৃত্যুর অপেক্ষমান থাকে?
সব মৃত্যুই কি বিষণ্ণ? নাকি কিছু মৃত্যু আনন্দের-নতুন জীবনের বারতা বয়ে আনে?
আপনার উত্তর আর আমার ভাবনার মাঝে মিল অমিল খুঁজে পেতে #বইটি অগ্রিম অর্ডার করতে পারেন আমার সাথে ম্যাসেঞ্জারে/হোয়াটসএ্যাপে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে অথবা সরাসরি বিকাশ করতে পারেন এই নম্বরে ০১৭২৩০৫৭৮২১।
‘স্বেচ্ছামৃত্যু’: জীবন ও মৃত্যুর দ্বন্দ্ব– এম আর লিটন
মৃত্যু… এক অমোঘ সত্য। যেখানে জীবনের অনিশ্চিত পথচলায় একসময় পৌঁছাতে হবে। কিন্তু তার আগের যাত্রাপথের মানে খুঁজে পাওয়া কঠিন। কবি বাহাউদ্দীন বাহারের ‘স্বেচ্ছামৃত্যু’ কবিতার বইটি পাঠককে এক গভীর, মর্মস্পর্শী যাত্রায় নিয়ে যাবে। যেখানে মৃত্যু যেন এক নিষ্ঠুর বাস্তবতার শত্রু নয়, বরং স্বেচ্ছায় বরণ করা একটি প্রকৃত মুক্তি।
বইটির প্রচ্ছদ চোখের সামনে এক অন্যরকম অনুভূতি আনে। কবির আত্মবিশ্বাস, অবলম্বনহীনতা এবং হৃদয়ের গভীর বেদনা যেন সুনিপুণভাবে ফুটে উঠেছে। শিল্পী রফি আহম্মেদ চঞ্চলের করা প্রচ্ছদ বিমূর্ত একটি মুখাবয়ব ধারণ করেছে। যা বিচ্ছিন্ন টুকরো আকারে ভাঙাচোরা অবস্থা সৃষ্টি করেছে। এটি যেমন মানসিক সংকটের চিত্র, তেমনি জীবনের এক বড় দ্বন্দ্বের প্রতীক। সবুজ, হলুদ, কমলা ও সাদা রঙের সংমিশ্রণ প্রাকৃতিক অস্থিরতার বার্তা দেয়। প্রচ্ছদ কবির ভাবনাকে এক সুস্পষ্ট ভাষায় প্রকাশ করে। পাঠককে বইটি খুলতে উদ্ভুদ্ধ করবে। এটি কোনো সাধারণ প্রচ্ছদ নয়। এটি আসলে বইয়ের অন্তর্নিহিত বেদনার প্রতিচ্ছবি। যা পাঠকের মনে গভীর ছাপ রেখে যায়।
‘স্বেচ্ছায়মৃত্যু’ নামটি এক অদ্ভুতভাবে শক্তিশালী ও চিন্তার উদ্রেককারী। এটি শুধু একটি শিরোনাম নয়। এটি একটি দর্শন। একটি ফিলোসফি যা মানব জীবনের সবচেয়ে অন্তর্নিহিত সত্যটিকে তুলে ধরে। কবির ভাষায়, ‘মৃত্যুই আমার কাছে সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত এবং চূড়ান্ত গন্তব্য।’ এটি মরণকে ভয় না পেয়ে, মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণের এক সাহসিকতাকে প্রকাশ করে। বইটির কবিতাগুলোর মধ্যে স্বেচ্ছামৃত্যু এক গভীর, দার্শনিক প্রশ্ন রেখে যায়—জীবনের উদ্দেশ্য কী? মৃত্যু কি সত্যিই শেষ? কি জানি, একদিন বাঁচার থেকে মৃত থাকতে হয় সুখী?
কবির লেখা ভিন্ন ভিন্ন কবিতার মধ্যে আমরা মৃত্যুর প্রতি এক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে পাই। তবে মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত এই অনুভূতিগুলোর মধ্যে কবি কখনো আত্মসমর্পণ করে। কখনো হতাশা আর শূন্যতার মধ্যে হারিয়ে যান। বইয়ের নানা কবিতায় উঠে আসে চিরন্তন বেদনা, অসহায়ত্ব ও শেষপর্যন্ত এক ধরনের মুক্তির সাধনা।
বাহাউদ্দীন বাহার তার কবিতায় যে ভাষার ব্যবহার করেছেন। তা অনেকটাই সরল। তবে ওই সরলতায় এক গভীর আধ্যাত্মিকতা ছড়িয়ে রয়েছে। তার শব্দচয়ন কখনো শক্ত, কখনো সজাগ, আবার কখনো গভীরভাবে মৃদু। পাঠককে কবিতার প্রতি আকৃষ্ট করবেই। কবির শৈলী এক কথায় স্পষ্ট। তিনি শব্দের মধ্যে এমন এক সুর বুনেছেন। যা প্রাণের গভীরে প্রবাহিত হয়। বিশেষত তার কবিতার কাব্যিক ভাষা এবং যন্ত্রণা ও কষ্টের প্রকাশ, পাঠককে অভ্যস্ত পরিসরে না রেখে, এক নতুন অনুভূতির দিকে নিয়ে যায়।
বাহাউদ্দীন বাহারের কবিতার গঠন কখনো স্বতঃস্ফূর্ত, কখনো দীর্ঘ বাক্যগঠন দিয়ে তৈরি, কখনো বা ছন্দের অভাবে স্ল্যাং ব্যবহার করে। এটি তার কবিতার স্বাভাবিকতাকে আরো প্রগাঢ় করে তোলে। ‘স্বেচ্ছামৃত্যু’ বইয়ের কবিতাগুলোতে একটি নির্দিষ্ট ছন্দের খোঁজ পাওয়া যায় না। কিন্তু এর মধ্যে একধরনের অনুপ্রবাহ থাকে। পাঠককে ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা দেয়। কবিতার মধ্যে বোধের দোলা, অনুভূতির প্রকৃতি খুবই স্পষ্ট।
বইটির মূল থিম হলো মৃত্যু। কিন্তু এই মৃত্যু শুধুমাত্র শারীরিক মৃত্যু নয়। এটি এক গভীর মানসিক ও আধ্যাত্মিক মৃত্যু, যা প্রতিটি কবিতার মধ্যে সন্নিবেশিত। কবি তার কবিতায় মৃত্যু, শূন্যতা, নিঃসঙ্গতা, ও এক নতুন জীবনের আগমন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। এমনকি, ‘আপোষ’ কবিতায়, কবি বলেছেন— ‘ভেঙে গেছে স্বপ্ন, আলো নেই কোথাও;’ যা জীবনবোধের নিষ্পত্তির দিকে একটি সূচনা। প্রতিটি কবিতা নিজস্ব বার্তা নিয়ে আসে। যা পাঠককে কিছু ভাবতে বাধ্য করবেই। মৃত্যুর প্রতি কবির দৃষ্টিভঙ্গি এমন, যে একে প্রতিকূলতা হিসেবে দেখেন না। এটি জীবনের অন্তর্গত।
বাহাউদ্দীন বাহারের কবিতায় ভাব প্রকাশের গভীরতা অত্যন্ত বিস্ময়কর। তিনি কেবল বাহ্যিক জগতের ঘটনাবলি নিয়ে নয়, জীবনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, সংগ্রাম এবং মনের অবস্থা নিয়েও লেখেন। বিশেষ করে তার কবিতায় ‘সমাধান মৃত্যুতে’ ও ‘গন্তব্য’ এই দুটি কবিতা, পাঠকের কাছে যেভাবে মনে গেঁথে যাবে, তার গভীরতার জন্য প্রশংসনীয়। কবির মানসিক টানাপোড়েন, জীবনের প্রতি অস্থিরতা ও মৃত্যুর প্রতি প্রবণতা, তার ভাবনায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
বাহাউদ্দীন বাহারের ‘স্বেচ্ছামৃত্যু’ একটি উঁচু মানের কবিতার বই। তার কবিতার গভীরতা, শব্দের দ্যোতনা এবং জীবনবোধ পাঠকদের এক নতুন দৃষ্টিকোণ উপহার দেয়। তিনি যে রকম নির্ভীকভাবে মৃত্যুর প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন। তা একদিকে যেমন অবিস্মরণীয়, তেমনি পাঠককে অভ্যস্ত জীবনের বাইরে নিয়ে গিয়ে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়।
‘স্বেচ্ছামৃত্যু’ বইটি কবি মা-কে উৎসর্গ করেছেন। মা-র মৃত্যু তাঁর জীবনে এক বিশাল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। মা-র শূন্যতা তাকে বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য করেছে। মা ছিলেন তাঁর জীবনের অমূল্য বন্ধু ও শিক্ষক। মা-ই তাঁকে শিখিয়েছিলেন, পথ দেখিয়েছিলেন। মায়ের মৃত্যু তাকে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি করেছে। তবে কবি বিশ্বাস করেন, মৃত্যুর পরেও একদিন আবার তাঁদের দেখা হবে। এটি একটি গভীর আবেগময় উৎসর্গ। মায়ের প্রতি তাঁর চিরন্তন ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা এখানে প্রকাশ পেয়েছে। মা-র মৃত্যু এক অনন্য প্রভাব ফেলেছে তাঁর জীবনে, যা কখনোই ভুলে যাওয়ার নয়। মায়ের উপস্থিতি তার শিক্ষার গুরুত্ব চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
কবি বাহাউদ্দীন বাহার। জন্মগ্রহণ করেছেন সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার গোদাড়া গ্রামে। তার শৈশব কাটে নানাবাড়িতে। সেখানে তার লেখালেখির হাতেখড়ি হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করা বাহাউদ্দীন বাহার একটি উন্নয়ন সংস্থার কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। তিনি লেখালেখি, বই পড়া, গান শোনা ও রান্না করতে ভালোবাসেন। তার কবিতা জীবনের কঠিন বাস্তবতা ও অন্তর্নিহিত বেদনা নিয়ে কথা বলেন। তার পাঠককেও একটি আত্মমগ্ন যাত্রায় নিয়ে যাবে।
‘স্বেচ্ছামৃত্যু’ বইটি ঘোড়াউত্রা প্রকাশন থেকে একুশে বইমেলায় (২০২৫) প্রকাশিত হয়েছে। এর প্রকাশনার মান ও বইটির উপস্থাপনা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বইটির মূল্য পাঠকদের কাছে সাশ্রয়ী হবে।
সবমিলিয়ে, ‘স্বেচ্ছায়মৃত্যু’ বাহাউদ্দীন বাহারের একটি অমুল্য সৃষ্টি। পাঠককে এক ভিন্ন দুনিয়ায় নিয়ে যাবে। জীবনের গভীরতা ও মৃত্যুর সঙ্গিনতা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করবে।
বই: স্বেচ্ছায়মৃত্যু
কবি: বাহাউদ্দীন বাহার
প্রকাশক: ঘোড়াউত্রা প্রকাশন
প্রপ্তিস্থান: একুশে বইমেলা, ২০২৫
মূল্য: ২৫০ টাকা।
চলবে…